গৃহিণী থেকে সফল কন্টেন্ট ক্রিয়েটর: জগিশা উপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণামূলক গল্প

একজন গৃহিণী, যিনি একসময় শিক্ষিকা ছিলেন, আজ তিনি Instagram এবং YouTube-এ শাড়ির মতো একটি মাইক্রো-নিশ বিষয় নিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের মন জয় করেছেন। তিনি হলেন জগিশা উপাধ্যায়। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর এই অসাধারণ যাত্রার কথা তুলে ধরেছেন, যা আমাদের সবার জন্য এক দারুণ অনুপ্রেরণা।

 

শুরুর গল্প: শাড়ি নিয়েই কেন কন্টেন্ট?

 

জগিশা জানান, তাঁর কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল লকডাউনের সময়। প্রথম দিকে তিনি সাধারণ লাইফস্টাইল ভিডিও বানালেও, যখনই তিনি শাড়ি নিয়ে কোনো পোস্ট দিতেন, তাতে লাইক এবং ভিউজ অনেক বেশি আসত। শাড়ির প্রতি তাঁর এই ভালোবাসা নতুন নয়; তাঁর দিদিমা এবং নানীকে দেখে ছোটবেলা থেকেই তিনি শাড়ির প্রেমে পড়েছেন। কোনো পেশাদার প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজের প্যাশন এবং অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তিনি শাড়ির এই মাইক্রো-নিশকে বেছে নেন।

 

পরিবারের সমর্থন: চ্যালেঞ্জ এবং বাস্তবতা

 

জগিশা অকপটে স্বীকার করেছেন যে একজন মহিলা কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের জন্য পরিবারের সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সৌভাগ্যবান যে তাঁর স্বামী তাঁকে সবসময় সমর্থন করেছেন এবং জীবনের বিভিন্ন ধাপে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছেন। তবে, তিনি এও বলেছেন যে সমাজে এখনও এমন অনেক লোক আছেন, যারা “পিছনে” বা “সামনে” থেকে নেতিবাচক মন্তব্য করেন।

“সবকিছু সবসময় মসৃণ ছিল, এটা বললে আমি মিথ্যা বলব। একজন বাড়ির বৌ বা বৌমা হিসাবে অনেক অপ্রীতিকর কথা শুনতে হয়েছে।” — জগিশা উপাধ্যায়।

তবে, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে এই ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য আসে সেইসব মানুষের কাছ থেকে, যারা নিজের জীবনে কিছু করতে পারেননি। তাই, তিনি সবসময় হাসিমুখে সেগুলির মোকাবিলা করেন।

 

কন্টেন্ট তৈরি এবং ম্যানেজমেন্ট

 

জগিশা জানান, তিনি একা হাতেই সবকিছু সামলান। তিনি নিজেই শ্যুট করেন, এডিট করেন এবং ভয়েসওভার দেন। শ্যুটিংয়ের জন্য তিনি প্রথমে একটি সাধারণ Redmi ফোন ব্যবহার করতেন এবং বর্তমানে iPhone ব্যবহার করেন, যা তাঁর স্বামী তাঁকে উপহার দিয়েছেন।

তিনি সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহের কন্টেন্ট আগে থেকেই প্ল্যান করে রাখেন, তবে যেকোনো নতুন ট্রেন্ড বা স্টাইল অনুযায়ী কন্টেন্টে পরিবর্তন আনতে তিনি সবসময় প্রস্তুত থাকেন। তাঁর বড় ছেলে, মাত্র ১৩ বছর বয়সী, তাঁর ছবি তুলে তাঁকে সাহায্য করে।

 

সফলতার মন্ত্র: সততা এবং মূল্যবোধ

 

জগিশা বলেন যে কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের মূল ভিত্তি হল সততা (Authenticity)। তিনি কখনও তার অডিয়েন্সকে মিথ্যা বলেন না। কোনো ব্র্যান্ডের পণ্য যদি তাঁর পছন্দ না হয়, তিনি তা ফিরিয়ে দেন, কারণ তাঁর কাছে তাঁর দর্শকদের বিশ্বাস সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বিশ্বাস করেন যে শুধু টাকার জন্য যেকোনো ব্র্যান্ডের প্রচার করা উচিত নয়। তিনি সবসময় এমন ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করতে পছন্দ করেন, যারা তাদের পণ্যের মান এবং প্যাশন নিয়ে সৎ। তাঁর কাছে পণ্যটি মানানসই এবং অর্থের জন্য মূল্যবান (Value for Money) হওয়াটা সবচেয়ে জরুরি।

 

ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত জীবন সামলানো

 

একজন গৃহিণী, দুই সন্তানের মা এবং একজন সফল কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে তিনি কীভাবে সবকিছু সামলান? জগিশা বলেন, “আমি মনে করি, একজন মা এবং স্ত্রী হওয়ার বাইরেও আমার নিজস্ব একটা পরিচয় আছে। আমার ছেলেরা যখন স্কুলে থাকে, আমি সেই সময়টা কাজে লাগাই।”

তিনি সব মহিলাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, নিজেদের জন্য অন্তত ১০ মিনিট সময় বের করতে। এটা শুধু কন্টেন্ট ক্রিয়েশন নয়, বরং যেকোনো শখ বা পেশার জন্য হতে পারে, যা আপনাকে ভবিষ্যতের শূন্যতা থেকে রক্ষা করবে।

 

নেতিবাচক মন্তব্য মোকাবিলা

 

জগিশা বিশ্বাস করেন যে নেতিবাচক মন্তব্যগুলো আসলে আপনার সফলতারই একটি চিহ্ন। তিনি প্রতিটি নেতিবাচক মন্তব্যের উত্তর দেন, তবে তা সম্মানজনকভাবে। তিনি বলেন, “যদি কেউ ভালো কিছু বলতে না পারে, তাহলে চুপ থাকাটাই ভালো।” তাঁর মতে, যারা নেতিবাচক মন্তব্য করে, তারা মূলত আপনার কাছ থেকে খারাপ প্রতিক্রিয়া আশা করে। যখন আপনি সুন্দরভাবে উত্তর দেন, তখন তারা আর কিছু বলতে পারে না।

জগিশা উপাধ্যায়ের এই গল্প আমাদের শেখায় যে প্যাশন, কঠোর পরিশ্রম এবং দৃঢ় সংকল্প থাকলে যেকোনো মাইক্রো-নিশ থেকেও সফলতা অর্জন করা সম্ভব। তিনি প্রমাণ করেছেন যে সমর্থন না থাকলে হয়তো জীবন কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়।

সোর্সঃ ইউটিউবের পোডক্যাস্ট (Satish K Videos)

এছাড়া পড়ুনঃ অনলাইন ক্যারিয়ারের পূর্ণাঙ্গ গাইড: শূন্য থেকে ইনকামের যাত্রা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top