আপনি যদি একজন বিজ্ঞাপনদাতা হন, তাহলে নিশ্চয়ই বিভিন্ন ধরনের ক্রিয়েটিভ, অ্যাড কপি এবং কৌশল পরীক্ষা করে দেখেছেন। এই সব করতে গিয়ে সময়, শক্তি, এবং অর্থ সবই নষ্ট হয়েছে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফলাফল হয়তো পাননি। হতাশ হবেন না, কারণ এই ভুলটি প্রায় ৯৫% বিজ্ঞাপনদাতারা করে থাকেন। 🤦♂️

আপনার যদি এই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে, তাহলে এখানে আপনার জন্য একটি গোপন কৌশল রয়েছে যা আপনার সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচাবে। এই কৌশলটি খুবই সহজ: আপনার সফল প্রতিযোগীদের কপি করুন! 🤫
কেন এই কৌশলটি এত কার্যকর?
প্রতিটি সফল ব্যবসা, বিশেষ করে আপনার একই ক্যাটাগরিতে যারা কাজ করছে, তারা ইতিমধ্যেই শত শত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি কার্যকর কৌশল খুঁজে পেয়েছে। তারা ইতিমধ্যেই কোন অ্যাড ক্রিয়েটিভ, অ্যাড কপি, বা কল-টু-অ্যাকশন (CTA) সবচেয়ে ভালো কাজ করে তা জেনে গেছে।
তাহলে, যে পথটি আপনার প্রতিযোগীরা ইতিমধ্যেই পার করে এসেছেন, আপনি কেন সেই একই পথ আবার নতুন করে শুরু করবেন? যখন কেউ অন্য কেউ আপনার জন্য সমস্ত গবেষণা ও পরীক্ষা করে একটি উইনিং স্ট্র্যাটেজি তৈরি করে রেখেছে, তখন তাদের অনুসরণ করাটা অনেক বেশি বুদ্ধিমানের কাজ। এই কৌশলটি আপনার ফলাফল প্রাপ্তির সময় ছয় মাস থেকে কমিয়ে মাত্র দুই মাসে নিয়ে আসতে পারে! 🚀
এই কৌশলটি সম্পূর্ণভাবে বুঝতে এবং কার্যকর করতে, এটিকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করা হয়েছে:
- ধাপ ১: প্রতিযোগী গবেষণা (Competitor Research)
- ধাপ ২: সফল প্রতিযোগীদের খুঁজে বের করা (Find Out Successful Competitors)
- ধাপ ৩: উইনিং অ্যাড বা কৌশল খুঁজে বের করা (Find Out the Winning Ad or Strategy)
- ধাপ ৪: তাদের মতো করে আপনার বিজ্ঞাপন তৈরি করা (Transform Your Ads Like Them)
এই ৪টি ধাপ সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনি নিশ্চিতভাবে অনেক ভালো ফল পাবেন। তবে মনে রাখবেন, পুরোটা কপি করা যাবে না, বরং তাদের কৌশল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের মতো করে ব্যবহার করতে হবে।
ধাপ ১: প্রতিযোগী গবেষণা
এই কাজটি করার জন্য, আপনাকে ফেসবুক অ্যাড লাইব্রেরি (Facebook Ad Library) ব্যবহার করতে হবে। এখানে আপনি যেকোনো ব্র্যান্ডের সক্রিয় বিজ্ঞাপন দেখতে পারবেন। একটি নতুন ব্রাউজার ট্যাব খুলুন এবং সেখানে ফেসবুক অ্যাড লাইব্রেরি লিখে অনুসন্ধান করুন।
এখানে আপনি দুটি প্রধান জিনিস দেখতে পাবেন:
১. দেশ (Country): আপনি যে দেশে বিজ্ঞাপন চালাতে চান, সেই দেশটি নির্বাচন করুন। মনে রাখবেন, আপনার প্রতিযোগিতা শুধুমাত্র আপনার দেশের বা এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই পুরো পৃথিবীর বিজ্ঞাপন খুঁজে লাভ নেই। ২. অ্যাড ক্যাটাগরি (Ad Category): বেশিরভাগ ই-কমার্স ব্র্যান্ড বা সাধারণ ব্যবসার জন্য “All Ads” নির্বাচন করুন। যদি আপনি রাজনীতি, আবাসন, বা কর্মসংস্থান সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন চালান, তাহলে “Special Ad Category” নির্বাচন করতে হবে।
এরপর, সার্চ বারে আপনার নির্দিষ্ট পণ্য বা ব্যবসার ধরন (যেমন: Women’s Clothing, Men’s Shoes, Kids Garments) অনুসন্ধান করুন। এখানে একটি সাধারণ ভুল হলো পুরো ক্যাটাগরি (যেমন: শুধু Clothing) না লিখে নির্দিষ্ট করে দেওয়া। এতে আপনি অপ্রয়োজনীয় বিজ্ঞাপন দেখা থেকে বাঁচবেন এবং আপনার গবেষণা আরও সুনির্দিষ্ট হবে।
এখন আপনি আপনার প্রতিযোগীদের সমস্ত সক্রিয় বিজ্ঞাপন দেখতে পাবেন। তাদের ক্রিয়েটিভ, অ্যাড কপি, এবং অন্যান্য কৌশলগুলি সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা নিন।
ধাপ ২: সফল প্রতিযোগীদের খুঁজে বের করা
সব বিজ্ঞাপনই সফল হয় না। তাই, সব প্রতিযোগীকে অনুসরণ করা ভুল। আপনাকে সেইসব প্রতিযোগীদের খুঁজে বের করতে হবে যাদের বিজ্ঞাপনগুলো ভালো ফল আনছে। এটি বোঝার একটি সহজ উপায় হল তাদের পেজের ফলোয়ার এবং এনগেজমেন্ট পরীক্ষা করা। 🤓
- অর্গানিক ফলোয়ার্স: যদি কোনো পেজে পোস্টের নিচে অনেক লাইক, কমেন্ট, এবং শেয়ার থাকে, তাহলে ধরে নিতে পারেন তাদের ফলোয়াররা আসল এবং অর্গানিক।
- ফেক ফলোয়ার্স: যদি ফলোয়ারের সংখ্যা অনেক বেশি হয় কিন্তু পোস্টে এনগেজমেন্ট কম থাকে, তাহলে সম্ভবত তারা ফলোয়ার কিনেছে।
যাদের ফলোয়াররা আসল বলে মনে হয়, তাদের পেজের নাম কপি করে আলাদা একটি তালিকায় রাখুন। এখন আপনার কাছে সফল প্রতিযোগীদের একটি তালিকা আছে।
ধাপ ৩: উইনিং অ্যাড বা কৌশল খুঁজে বের করা
এখন এই তালিকা থেকে আপনাকে সেই বিজ্ঞাপনগুলো খুঁজে বের করতে হবে যা সত্যিই ভালো পারফর্ম করছে। এই কাজটি করার জন্য, আপনি ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার ব্যবহার করতে পারেন:
- অ্যাড কপি (Ad Copy)
- অ্যাড ক্রিয়েটিভ (Ad Creative)
- সিটিএ বাটন (CTA Button)
- হেডলাইন (Headline)
- বিজ্ঞাপনের সময়কাল (Ad Duration)
- অবস্থান (Location)
- প্রকারভেদ (Variance)
- প্ল্যাটফর্ম (Platform)
- টার্গেট (Target)
- অ্যাডের উদ্দেশ্য (Ad Objective)
এই সব প্যারামিটারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিজ্ঞাপনের সময়কাল (Ad Duration)। যদি কোনো বিজ্ঞাপন দুই-তিন মাস ধরে সক্রিয় থাকে, তাহলে এটি একটি নিশ্চিত লক্ষণ যে বিজ্ঞাপনটি লাভজনক এবং ভালো ফল দিচ্ছে। কোনো বিজ্ঞাপনদাতা কোনো লাভহীন বিজ্ঞাপন এত দীর্ঘ সময় ধরে চালাবে না।
এই দীর্ঘস্থায়ী বিজ্ঞাপনগুলো মনোযোগ সহকারে দেখুন। তাদের ক্রিয়েটিভ (ভিডিও, ইমেজ, ক্যারোসেল), ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, অ্যাড কপি এবং CTA বাটনগুলো নোটবুকে লিখে নিন।
ধাপ ৪: তাদের মতো করে আপনার বিজ্ঞাপন তৈরি করা
অবশেষে, এই গবেষণার ফল আপনি আপনার নিজের বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। এর মানে এই নয় যে আপনি তাদের ভিডিও ডাউনলোড করে ব্যবহার করবেন বা তাদের অ্যাড কপি হুবহু নকল করবেন। উদ্দেশ্য হলো তাদের কৌশল থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি দেখেন যে কোনো প্রতিযোগী তাদের বিজ্ঞাপনে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বা পডকাস্ট-স্টাইলের ভিডিও ব্যবহার করছে, এবং সেগুলো ভালো কাজ করছে, তাহলে আপনিও একই ধরনের ভিডিও তৈরি করতে পারেন। এই ধরনের কৌশলগুলো গ্রাহকদের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করে, কারণ তারা মনে করে এটি একটি আসল বা রিভিউ ভিডিও, কোনো সোজাসুজি বিজ্ঞাপন নয়।
এই গবেষণা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনি আপনার নিজের বিজ্ঞাপনে একটি নতুন এবং কার্যকর দিকনির্দেশনা পাবেন। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি আপনার বিজ্ঞাপনকে আরও সফল করতে সাহায্য করবে এবং আপনার সময় ও অর্থ উভয়ই সাশ্রয় করবে।
এছাড়া পড়ুনঃ
২০২৫- এ কেন ডিজিটাল মার্কেটিং শিখবেন?
₹২৫,০০০ খরচ করে ₹১,২৪,০০০ লাভ: ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রির গোপন কৌশল




