আপনি কি আপনার ই-কমার্স ব্যবসার জন্য Facebook Ads থেকে সেরা ফলাফল পেতে চান কিন্তু জানেন না কীভাবে শুরু করবেন? যদি আপনার বাজেট কম থাকে, তাহলেও হতাশ হবেন না। সঠিক কৌশল অনুসরণ করলে আপনিও কম বাজেটে চমৎকার ফলাফল পেতে পারেন। এই আর্টিকেলে আমরা এমন একটি কার্যকর Facebook Ads কৌশল নিয়ে আলোচনা করব, যা আপনাকে ভালো ROI (Return on Investment) এবং ROAS (Return on Ad Spend) পেতে সাহায্য করবে।

ক্যাম্পেইন সেটআপ: প্রথম ধাপ
শুরু করার জন্য আপনাকে একটি নতুন ক্যাম্পেইন তৈরি করতে হবে। এই ক্যাম্পেইনটি হবে আপনার পরীক্ষার ক্ষেত্র।
১. প্রথমে আপনার ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার-এ গিয়ে একটি নতুন ক্যাম্পেইন তৈরি করুন। ২. ‘Sales’ অপশনটি বেছে নিন। ৩. এরপর ‘Manual Sales Campaign’ এ ক্লিক করে ‘Continue’ করুন।
এই ক্যাম্পেইনের প্রধান লক্ষ্য হলো আপনার পণ্যের জন্য সেরা পারফর্ম করা অ্যাড খুঁজে বের করা।
ক্যাম্পেইন বাজেট অপটিমাইজেশন (CBO)
এই কৌশলটির মূল ভিত্তি হলো ক্যাম্পেইন বাজেট অপটিমাইজেশন, যা এখন Advantage Campaign Budget নামে পরিচিত।
১. ক্যাম্পেইনের বাজেট সেটিংস-এ যান এবং ‘Advantage Campaign Budget’ অপশনটি চালু করুন। ২. বাজেট হিসেবে দৈনিক ₹৫০০ টাকা রাখুন। এটি কম বাজেটে শুরু করার জন্য একটি আদর্শ পরিমাণ।
এই সেটিংটি ফেসবুকে আপনার বাজেটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করবে, কারণ এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভালো পারফর্ম করা অ্যাডের দিকে বেশি বাজেট বরাদ্দ করবে।
অ্যাড সেট এবং টার্গেটিং
এই ধাপে আপনার টার্গেটিং কৌশলটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কম বাজেটে সফল হওয়ার জন্য আপনাকে ব্রড টার্গেটিং ব্যবহার করতে হবে।
১. অ্যাড সেট সেটিংসে, আপনার টার্গেটিং ‘Broad’ রাখুন। ২. আপনার পিক্সেল সঠিকভাবে সেটআপ করুন। ৩. এই ধাপে লোকেশন, বয়স বা লিঙ্গের মতো কোনো টার্গেটিং পরিবর্তন করবেন না। শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট এলাকা, যেমন: দিল্লি বা মুম্বাই, যেখানে আপনি পণ্য ডেলিভারি করতে চান না, সেগুলি বাদ দিতে পারেন।
অ্যাডের ক্রিয়েটিভ এবং পরীক্ষা
এই ধাপে আপনি বিভিন্ন অ্যাড ক্রিয়েটিভ পরীক্ষা করবেন।
১. আপনার পণ্যের জন্য কমপক্ষে ৫টি ভিন্ন ভিন্ন অ্যাড ক্রিয়েটিভ (ছবি বা ভিডিও) তৈরি করুন। ২. এই ৫টি অ্যাডই আপনার প্রথম অ্যাড সেটের অধীনে যুক্ত করুন। ৩. আপনার বাজেট কম হলে, এটি নিশ্চিত করবে যে আপনার কাছে সেরা পারফর্ম করা অ্যাডটি খুঁজে বের করার পর্যাপ্ত অপশন আছে।
মনে রাখবেন: আপনাকে এই ক্যাম্পেইনটি কমপক্ষে ৫ দিনের জন্য চালাতে হবে। এটি ফেসবুকে আপনার অ্যাডগুলো সঠিকভাবে অপটিমাইজ করার জন্য যথেষ্ট সময় দেবে।
সফল অ্যাড খুঁজে বের করা: ক্যাম্পেইন ২
৪-৫ দিন পর আপনার প্রথম ক্যাম্পেইনের ডেটা বিশ্লেষণ করার সময় এসেছে।
১. আপনার প্রথম ক্যাম্পেইনের পারফরম্যান্স দেখুন। ২. কোন অ্যাডটি সেরা পারফর্ম করছে, তা খুঁজে বের করুন। এখানে “সেরা পারফর্ম” বলতে শুধু বেশি বিক্রি বোঝায় না। এর মানে হলো যে অ্যাডে বেশি বাজেট খরচ হয়েছে এবং যার ROAS সবচেয়ে ভালো। ৩. যে অ্যাডটি ভালো পারফর্ম করছে, সেটিকে বেছে নিন।
নতুন অটোমেটিক ক্যাম্পেইন সেটআপ
এখন আপনি আপনার সফল অ্যাডটি ব্যবহার করে একটি নতুন ক্যাম্পেইন তৈরি করবেন, যা আপনাকে আরও ভালো ফলাফল দেবে।
১. একটি নতুন ক্যাম্পেইন তৈরি করুন এবং ‘Sales’ অপশনটি বেছে নিন। ২. এবার ‘Automatic Sales Campaign’ এ ক্লিক করে ‘Continue’ করুন। ৩. এই নতুন ক্যাম্পেইনে আপনার কোনো নতুন অ্যাড সেট তৈরি করার দরকার নেই। ৪. আপনার প্রথম ক্যাম্পেইনের সফল অ্যাডটি কপি করুন (Duplicate)। ৫. কপি করা অ্যাডটি আপনার নতুন অটোমেটিক ক্যাম্পেইনে ‘Existing Post’ হিসেবে পেস্ট করুন।
এই কৌশলটি আপনাকে আপনার সেরা পারফর্ম করা অ্যাডের মাধ্যমে আরও বেশি বিক্রি এবং ভালো ROAS পেতে সাহায্য করবে।
লাইভ প্রমাণ এবং ফলাফল
এই কৌশল ব্যবহার করে আপনি অবিশ্বাস্য ফলাফল পেতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, এই কৌশল অনুসরণ করে একজন অ্যাভেলেজ ব্যবসায়ী ₹৯৮ টাকা বাজেটে ₹১৯ এবং ₹১৭ ROAS-এর মতো অসাধারণ ফলাফল পেয়েছে।
এই কৌশলটি কম বাজেটের ব্যবসায়ী বা ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য খুবই কার্যকর। এটি আপনাকে অযথা টাকা নষ্ট না করে আপনার অ্যাড স্পেন্ড থেকে সর্বোচ্চ রিটার্ন নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
এই কৌশলটি আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে শুধু বাজেট বাড়িয়ে দিলেই হয় না, বরং সঠিক কৌশল অনুসরণ করে কম বাজেটেও ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
ধারাবাহিক আয়ের জন্য কেন নিয়মিত বিজ্ঞাপন জরুরি?
যদি আপনি কোনো ব্যবসা পরিচালনা করেন অথবা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন, তবে ধারাবাহিক আয় নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত বিজ্ঞাপন চালানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে অনেকেই বিজ্ঞাপনকে অপ্রয়োজনীয় খরচ মনে করেন, কিন্তু এটি আসলে ভবিষ্যতের একটি কার্যকরী বিনিয়োগ।
আপনি প্রতিদিন মাত্র ১০০-২০০ টাকা খরচ করেও আপনার ব্যবসার চেহারা পাল্টে দিতে পারেন। এতে আপনার পণ্য বা পরিষেবা নতুন নতুন গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে পারে এবং আপনার বিক্রি অনেক বেড়ে যায়।
কেন বিজ্ঞাপন শুরু করা উচিত?
অনেকের ধারণা, ছোট বাজেট দিয়ে বিজ্ঞাপন শুরু করলে তেমন কোনো লাভ হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ছোট বাজেট দিয়ে শুরু করলে আপনি ধীরে ধীরে শিখতে পারবেন এবং আপনার বিজ্ঞাপনের কার্যকারিতা বাড়াতে পারবেন।
- কম খরচে শুরু করুন: প্রতিদিন মাত্র ১৫০ টাকা খরচ করেও আপনি বিজ্ঞাপন শুরু করতে পারেন। এই খরচ আপনার ব্যবসার জন্য নতুন গ্রাহক নিয়ে আসবে।
- টার্গেটেড কাস্টমার: মেটা বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আপনি আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে পৌঁছাতে পারেন। এতে বিজ্ঞাপনের বাজেট সঠিক জায়গায় ব্যয় হয়।
- পিক্সেল অপ্টিমাইজেশন: আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থাকে, তবে সেখানে মেটা পিক্সেল যুক্ত করতে পারেন। এই পিক্সেল আপনার ওয়েবসাইটে আসা ভিজিটরদের আচরণ বিশ্লেষণ করে এবং বিজ্ঞাপনকে আরও দক্ষ করে তোলে। ফলে বিজ্ঞাপন সঠিক লোকদের কাছে পৌঁছায় এবং আপনার ROI (Return on Investment) বাড়ে।
বিজ্ঞাপনের ধরন এবং কৌশল
মেটা বিজ্ঞাপনের জন্য আপনার একটি ল্যান্ডিং পেজ না থাকলেও চলবে। আপনি ‘ইনস্ট্যান্ট ফর্ম’ ব্যবহার করে লিড জেনারেশন (Lead Generation) বিজ্ঞাপন চালাতে পারেন। এতে গ্রাহক ফর্ম পূরণ করলে তার তথ্য সরাসরি আপনার কাছে চলে আসে।
বিজ্ঞাপনের গুণগত মান বৃদ্ধির কৌশল:
আপনি যদি ‘ইনস্ট্যান্ট ফর্ম’ বিজ্ঞাপন ব্যবহার করেন, তবে আপনার লিডের মান বাড়াতে একটি বিশেষ কৌশল ব্যবহার করতে পারেন।
যখন আপনি মেটা লিড ম্যানেজারে আপনার লিডগুলো দেখবেন, তখন সেখানে বিভিন্ন অপশন থাকে, যেমন: Not Contacted, Contacted, Converted, ইত্যাদি। যখন আপনি কোনো লিডকে Converted বা Closed হিসেবে চিহ্নিত করবেন, তখন ফেসবুকের অ্যালগরিদম বুঝতে পারে যে এই ধরনের গ্রাহকরা আপনার জন্য লাভজনক।
এর ফলে ফেসবুক আপনার বিজ্ঞাপন সেই ধরনের আরও বেশি মানুষের কাছে দেখাতে শুরু করে, যারা আপনার পণ্য বা পরিষেবা কেনার সম্ভাবনা বেশি রাখে। এতে আপনার লিডের গুণগত মান অনেক বেড়ে যায়। এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর এবং এটি অনেকেই জানেন না।
বিজ্ঞাপনের বাইরে অন্য কিছু
বিজ্ঞাপন চালানোর পাশাপাশি আপনার ব্যবসার জন্য একটি ভালো CRM (Customer Relationship Management) সফটওয়্যার ব্যবহার করা উচিত। এটি আপনাকে লিডগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করতে এবং ফলোআপ করতে সাহায্য করে। আপনি প্রিভিয়ার (Previa), পাইপড্রাইভ (PipeDrive), অথবা ওডু (Odoo) এর মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন। প্রিভিয়ারের মতো কিছু প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক লিড ম্যানেজার থেকে সরাসরি ডেটা সিঙ্ক করে নেয়, যা কাজকে অনেক সহজ করে তোলে।
শেষ কথা
আজকের দিনে অর্গানিক রিচ বা স্বাভাবিকভাবে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো খুব কঠিন হয়ে গেছে। তাই আপনার ব্যবসা বৃদ্ধি করতে হলে মেটা বিজ্ঞাপনে বিনিয়োগ করা এখন আর কোনো বিকল্প নয়, এটি একটি অপরিহার্য প্রয়োজন।
মনে রাখবেন, ছোট বাজেট দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে আপনার আয় বাড়ার সাথে সাথে বিজ্ঞাপনের বাজেটও বাড়ান। এভাবে আপনি আপনার ব্যবসাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবেন।
যদি আপনার বিজ্ঞাপন চালাতে কোনো সমস্যা হয় বা কোনো ধরনের সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তবে আপনি একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। আপনার ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য বিজ্ঞাপনকে একটি নিয়মিত অংশ হিসেবে গ্রহণ করুন।
সোর্সঃ https://youtu.be/XE6PoGmw9T0
এছাড়া পড়ুনঃ
মেটা অ্যাডস: সেরা কিছু ফ্রি টুলস, যা আপনার অ্যাডস ক্যাম্পেইন বদলে দেবে!




