অনেকেই ভাবেন ফ্রিল্যান্সিং মানে শুধু বড় বড় প্রজেক্ট আর মোটা অঙ্কের ইনকাম, যা সহজে সম্ভব নয়। আবার অনেকেই বলেন, এ সবই নাকি ভুয়া! কিন্তু সত্যিটা কি? আসুন, একজন অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্স ভিডিও এডিটর হিসেবে আমি মজাদুল ইসলাম শিশির, আমার একটি সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিই, যা হয়তো আপনার ধারণাকে পাল্টে দেবে।
রাত ১২টা, ক্লায়েন্টের জরুরি মেসেজ!
গত রাতে হঠাৎ করে আমার পুরোনো একজন ক্লায়েন্টের জরুরি মেসেজ এলো। সে যুক্তরাষ্ট্রের (USA) ক্লায়েন্ট, তাই আমার রাত ১২টা মানে তার ওখানে দুপুর ১২টা বা ১টা। তার একটি প্রজেক্ট খুব দ্রুত, অর্থাৎ দিনের শেষ (end of the day) হওয়ার আগেই জমা দেওয়া দরকার। প্রজেক্টটা ছিল বেশ ইন্টারেস্টিং। প্রথমটায় ভাবলাম, আজ রাতে তো আর সম্ভব নয়, কাল সকালে করব। কিন্তু তার জরুরি প্রয়োজন শুনে আমি বললাম, “ঠিক আছে, আপনি ফাইল পাঠান, আমি দেখে জানাই।”
প্রজেক্ট ফাইল দেখে বুঝলাম, এটা একটি সাধারণ জুম মিটিংয়ের ভিডিও। কাজটা খুবই সিম্পল:
- ভিডিওটির মূল জুম স্ক্রিনের ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করা।
- পাশাপাশি থাকা অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের ছোট স্ক্রিনগুলো ঠিক রাখা।
- ব্যাকগ্রাউন্ডে পর্বত ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় (tropical) দৃশ্যের ছবি ব্যবহার করা।
- ৪-৫টি ভিন্ন ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করা।
- ভিডিওর প্রধান চরিত্র, অর্থাৎ ম্যাসকটটির জন্য কিছু মজাদার ফিল্টার, যেমন সানগ্লাস বা কাউবয় টুপি যোগ করা।
কিভাবে কাজটি শেষ করলাম?
আমার হাতে মাত্র ৫-৬ ঘণ্টা সময় ছিল। আমি ক্লায়েন্টকে আশ্বস্ত করলাম এবং কাজ শুরু করলাম। কোনো সফটওয়্যার খোলার আগে আমি গুগল থেকে ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী কিছু পর্বত ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ছবি ডাউনলোড করে নিলাম। তারপর আমি Adobe After Effects-এ কাজ শুরু করি।
ধাপ ১: মাস্কিং আমি প্রথমে পেন টুলের সাহায্যে ভিডিওর অংশগ্রহণকারীদের স্ক্রিনগুলো মাস্কিং করে নিলাম। এরপর পুরো জুম স্ক্রিনটিকে আলাদাভাবে মাস্কিং করে নিলাম, যাতে ব্যাকগ্রাউন্ড শুধু স্ক্রিনের ভেতরেই থাকে।
ধাপ ২: রোটোস্কোপিং এরপর আমি রোটো ব্রাশ টুলের সাহায্যে ম্যাসকটটিকে তার ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আলাদা করে নিলাম। এটি একটি সময়সাপেক্ষ কাজ হলেও, এই টুলটি দ্রুত কাজ করে।
ধাপ ৩: ব্যাকগ্রাউন্ড যুক্ত করা যেসব ছবি ডাউনলোড করেছিলাম, সেগুলো একে একে আলাদা লেয়ারে বসিয়ে দিলাম। প্রতিটি ব্যাকগ্রাউন্ড ৫-১০ সেকেন্ড পরপর পরিবর্তিত হতে থাকে, যা ক্লায়েন্টের চাহিদা পূরণ করে।
ধাপ ৪: ফিল্টার যোগ করা পরে ক্লায়েন্ট কিছু নির্দিষ্ট ফিল্টার যোগ করতে বললেন। আমি সেগুলো যথাস্থানে বসিয়ে দেই। এই ফিল্টারগুলো ভিডিওটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
পুরো কাজটা শেষ করতে আমার প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে। কাজ শেষ করে ক্লায়েন্টকে পাঠানোর পর সে খুবই খুশি হন এবং তার ক্লায়েন্টও কাজটি পছন্দ করেন।
প্রমাণ এবং শিক্ষা
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, “কাজটা শেষ করার আগেই কি পেমেন্ট পাওয়া সম্ভব?” উত্তর হলো, হ্যাঁ। এই প্রজেক্টের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট আমাকে কাজ সম্পূর্ণ করার আগেই $70 পেমেন্ট করে দেন, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮,৩০০ টাকা।
এই অভিজ্ঞতা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার: ফ্রিল্যান্সিং কোনো কেলেঙ্কারি (scam) নয়! সঠিক দক্ষতা, সময় জ্ঞান, আর সততা থাকলে আপনিও ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে পারেন। হয়তো সব প্রজেক্টে এত সহজে এত বেশি ইনকাম করা সম্ভব নয়, কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিশ্রম দিয়ে ছোট-বড় অনেক প্রজেক্ট সফলভাবে শেষ করে আপনি আপনার ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
এছাড়া পড়ুনঃ
₹২৫,০০০ খরচ করে ₹১,২৪,০০০ লাভ: ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রির গোপন কৌশল
অনলাইন ক্যারিয়ারের পূর্ণাঙ্গ গাইড: শূন্য থেকে ইনকামের যাত্রা